সব গিয়ে থুয়ে মানুষের হাতে যা কিছু থেকে যায়- তার নামই স্মৃতি। বাড়িঘর ধনসম্পদ অর্থবিত্ত- সবকিছুই হারিয়ে যেতে পারে কোন না কোনদিন, কোন না কোন কারনে। আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যেতে পারে ওসবকিছু। কিন্তু স্মৃতি চুরি করা যায়না, স্মৃতি পুড়ে না, মাঝে মধ্যে পোড়ায় কেবল! কালে কালে ধুসর হয় স্মৃতির পাতা। স্মৃতির ধুসর সেই পাতা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। ওটাই শেষ সম্বল। আপনি আমি এর বাইরে নই।
একটু আগে একটা ফোল্ডারে কয়েকটা ছবি খুঁজে পেলাম- যেগুলো আগে কোনদিন আপনাদের সামনে প্রকাশ করেছি বলে মনে পড়ে না। ছবিগুলোর সাথে সেই ছবিগুলোর কাহিনীগুলো লিখে দেবার চেষ্টা করেছি। তাতে কিছুটা তথ্য হয়তো পাওয়া যেতে পারে। জানিনা, এগুলো কার কতখানি ভালো লাগবে! তারপরেও, আমার স্মৃতি থেকে একটি ছবি আপনাদের কাছে আজ রাখছি। দেখলে খুশী হবো।
প্রামাণ্যচিত্রঃ পাঁচদোনা অপারেশন ’৭১
লোকেশনঃ পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পাড় এবং পাঁচদোনা (নরসিংদী)
ধারণকালঃ ১৯৯৬ সাল।
ছবিতেঃ (বাঁদিক থেকে) মেজর জেনারেল মতি (প্রয়াত), কাওসার চৌধুরী, শাইখ সিরাজ। এই প্রামাণ্যচিত্রটির নির্দেশনায় ছিলেন শাইখ সিরাজ, আমি (কাওসার চৌধুরী) ছিলাম চিত্রগ্রাহক। একাত্তরে ক্যাপ্টেন থাকাকালে মেজর জেনারেল মতি এই লোকেশনে তাঁর ছোট্ট দল নিয়ে পাকিস্তানিদের পরাস্ত করেছিলেন। তারই একটি অংশের চিত্রধারণ (re-anacted) করেছিলাম সেদিন। চিত্রগ্রহনের পূর্বে লোকেশন শুটিং-এর কিছু ধারণা জেনারেল সাহেবের সাথে শেয়ার করছিলাম তখোন।
* উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই মহান মুক্তিযুদ্ধের ২২টি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ‘রি-মেক’ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে ‘ইমপ্রেস টেলিফিল্ম’ (চ্যানেল আই তখনো হয় নি) দুইটি যুদ্ধ পুনর্নির্মাণ করার দায়িত্ব পায়। ১. পাঁচদোনা অপারেশন, ২. গোদনাইল (নারায়নগঞ্জ) অপারেশন।
‘পাঁচদোনা অপারেশন’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি র্নির্মাণ করার জন্য চিত্রগ্রাহক হিসেবে আমাকেই নিয়েছিল ইমপ্রেস। ‘গোদনাইল (নারায়নগঞ্জ) অপারেশন’-এর মূল চিত্রগ্রাহক ছিলেন খালিদ মাহমুদ মিঠূ (প্রয়াত)। ওটার কিছু অংশের চিত্রগ্রহন আমিও করেছিলাম (হেলিকপ্টার থেকে গোদনাইল অয়েল ট্যাংকারে গোলাবর্ষণ)।
‘পাঁচদোনা অপারেশন’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রথমবারের মত আমি যুগপৎ যুদ্ধ-বিমান, যুদ্ধ-জাহাজ ব্যবহার, স্থল এবং জলভাগে মাইন বিষ্ফোরণের চিত্রধারণ করি। এই প্রামাণ্যচিত্রদু’টি ‘ইমপ্রেস টেলিফিল্ম’-এ সংরক্ষিত আছে।
———————————
এখানে ব্যবহৃত ছবিটি সেদিন কে যে তুলেছিলেন- এখন স্মরণ করতে পারছি না বলে খুবই দুঃখিত।
Leave a Reply