আমার এগারোতম বিবাহ বার্ষিকীতে মাহমুদ আমাকে খাঁচাবন্দি দুটি পাখি উপহার দেয় l সেই পাখি পেয়ে আমার খুশি দেখে মাহমুদ বিস্মিত হয় l ওদের পরিচর্যায় আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখি, গাছের পরিচর্যা সব মিলিয়ে আমার সময় সুন্দর কেটে যাচ্ছিলো l একদিন খাঁচার ভেতর ছোট্ট কলসে ছোট্ট দুটি ডিম দেখতে পেলাম, ভাবলাম আমার সন্তান নেই তো কি হয়েছে, ওদের সংসার এর বিস্তৃতেই আমি সুখী হবো l কিন্তু, পুরুষ পাখিটি একদিন সেই তা দেওয়া ডিম ভেঙে খেয়ে ফেললো l আমার বুক ভেঙে গেলো, নিজের কষ্টটুকু মেয়ে পাখিটির ভেতর খুঁজে পেলাম l কিছুকাল পর আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো l ওদের এই ছন্নছাড়া সন্ন্যাস জীবনও আমি নিজের মাঝে খুঁজে পেলাম l আমরা শিকল ভেঙে বের হতে চাই আর পাখিকে বন্দিত্বের জীবন উপহার দেই l উপলব্ধির জায়গা থেকে মাহমুদ আর আমি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলাম না পাখি দুটো আমরা কাউকে হস্তান্তর করবো কিনা নাকি মুক্ত বিহঙ্গের জীবন উপহার দিবো l এরই মধ্যে দুদিন আগে হঠাৎ মাহমুদ বেলকনিতে যেয়ে দেখতে পায় খাঁচা বন্ধ কিন্তু মেয়ে পাখিটা আর নেই l আমাকে মাহমুদ পাগলের মতো ডাকে সারা সারা, আমি দৌড়ে যাই বেলকনিতে কোথায় টিয়া! কোথাও নেই l নিঃসঙ্গ নীলু বসে আছে টিয়া বিহীন শূন্য খাঁচায় l আমার উপলব্ধিতে আসে এই সংসার জীবন কখনো বিতৃষ্ণাময় হয়ে উঠে আবারো কখনো সঙ্গীহীন শূন্য জীবন মরুভূমির মতও রূপ নেয় l
বিকেলের রঙ আবছায়া বাদামি
খাট থেকে দু’কদম নামলো রোদটুকু
পাতার ফাঁকে শেষ বিকেলের লালচে রঙ ঘন হয়
আমার ভাতঘুম তখনো কাটেনি
নীলু কাঁদছে পাখা ঝাপটিয়ে
এলোমেলো পোশাকে ছুটি কার্নিশে
টিয়া নেই, মেঘও নেই আকাশে
দরজা ঠিক তেমনটাই যেমনটা ছিল!
ছাই রঙ আকাশে অস্থির নিঃস্তব্দতা নামে
একবুক শূন্যতা ঘিরে নীলু বসে আছে নিঃসঙ্গ
সব পাখি নীড়ে ফেরে না
কিছু পাখি নিরুদ্দেশে পাড়ি জমায়
চুকিয়ে জীবনের সব লেনদেন!
মাহমুদ নীলুর জন্য আবারো নতুন একটি বৌ কিনে এনেছে, অবিকল টিয়ার মতো ।
উপলব্ধির জায়গা থেকে
সারা ফেরদৌস
ঢাকা, বাংলাদেশ
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply