গতমাসে লক্ষীপুর জজকোর্টের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এক তরুণ আত্মহত্যা করেছে।
অপমান আর অসম্মানের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার এই আত্নহননের পথ বেছে নেয়া। কারণ তার মা তাকে চুরির অপবাধ দিয়েছে। অথচ ছেলেটার ভাষ্যমতে, পরবর্তীতে তার আত্মহত্যার কারণে আমরা সবাই জানতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে সে চুরির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে” অপমানের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়”।
একটা খেটে খাওয়া অশিক্ষিত যুবক অসম্মানিত জীবনের চেয়ে শ্রেয় জীবনটাই বেছে নিয়েছে।
যদিও আত্নহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। তার উচিত ছিল বেঁচে থেকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করে হারানো অসম্মান ফিরিয়ে আনা।
বহুবছর আগে আমার নানু বাড়ির পাশে একমহিলা জমিতে দেয়া পোকামাকড়ের কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। নয়বছর ভালোবেসে বাবা-মায়ের অমতে গিয়ে বিয়ে করে বিয়ের ছয়মাসের মাথায় তার এই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ তার শাশুড়ি তাকে চুরির অপবাধ দিয়েছে। কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই তার স্বামী সেটা বিশ্বাস করে নিয়েছে।
অপমান অসম্মানের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার এই আত্মহত্যা। গ্রামের সহজ-সরল এই নিষ্পাপ গৃহবধূর কাছে অসম্মানের জীবনের চেয়ে মুত্যুটাই শ্রেয় মনে হয়েছে।
উপরের দু’টো উদাহরন আমি জানি, আমি দেখেছি, শুনেছি। এরকম সহস্র উদাহরন আপনারা সবাই জানেন। কারণ কিছু মানুষের কাছে সম্মানের মূল্য হাজার কোটি টাকা। কখনো কখনো একটা জীবনের চেয়েও অধিক মূল্যবান। কারণ এদের টাকা নেই, পয়সা নেই, গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, নেই, নেই কিচ্ছু নেই। থাকার মধ্যে এই সম্মানটুকুই আছে।
সেটা চুরির অপবাধে ধূলায় মিশে যেতে দেখে তারা আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল কুমিল্লা নিবাসী রাজধানীর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাসরত মোশারফ জাহান মুনিয়া নামের মেয়েটা কেন আত্মহত্যা করেছে সেটা কোনোভাবেই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
সে তো দরিদ্র নয়, সে তো নিঃস্ব নয়। চুরির অপবাধ তো তার কাছে বড় অসম্মানের নয়। তার বাবা মহান মুক্তিযোদ্ধা। সে ঢাকায় পড়াশোনা করে, যে বিশেষ কলেজ লকডাউনের সময়ও খোলা থাকে। যেখানে সারাবিশ্বে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সেখানে সে রোজার মাসেও একলক্ষ টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থেকে রোজ দিনে- রাতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বিরতিহীনভাবে। যেটা সম্পর্কে তাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, পরিবারের বড় বোন সবাই অবগত।
যে এত বেশি পড়াশোনা করা উচ্চ শিক্ষিত! তার তো সামান্য চুরির অপবাধে আত্মহত্যা করার কথা নয়। কারণ চুরি তো তার ছোট্ট জীবনে করা অপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট অপরাধ। যার সম্মান নেই তার তো অপমানিত হওয়ারও ভয় থাকে না।
তাহলে সে কেন আত্মহত্যা করল?
আচ্ছা ধরেই নিলাম সে আত্মহত্যা করেনি তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মেয়েটাকে যে হত্যা করেছে সে যদি অপরাধী হয়, তাহলে মেয়েটার পরিবারও সে অপরাধের দায় এড়াতে পারবে না কোনোভাবেই।
একটা কন্যাসন্তান একটা জান্নাত। আপনার কন্যা সন্তানের জান -মাল,ইজ্জত -আব্রুর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনার। আপনি কেন ছেড়ে দিয়েছেন আপনার মেয়েকে বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা করার জন্য।
পার্টি, মদ, ছেলে বন্ধু, ডিজে করার জন্য। রোজার মাসে কোন কলেজে পড়ার জন্য আপনার মেয়ে বাড়ি না এসে ঢাকা থেকে গিয়েছে আপনি কি খোঁজ নিয়েছেন? সে যে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকছে তার টাকার উৎস কী! আপনি কি জানতে চেয়েছেন?
জানেন “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু “।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply