গুনগুন করে এই গান গাই, কোন লাভ হয় না। পান খেতে চাইলেই বরের উত্তর, না। আমি তো সবসময় পান খাই না। শখে, মাঝেসাঝে। ভালোমন্দ মানে পোলাও, বিরিয়ানি খাবার পরে খাই আর শীতকালে। ছেলেবেলা থেকেই জানি-
“পান, পানি, পিঠা,
এই তিন শীতে মিঠা।”
শীতকালে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে রোদে পিঠ দিয়ে বসে পান চিবুনোর স্বাদ অন্য কিছুতেই মিলে না। মুখটা যেমন মিষ্টি হয়ে যায় মনটাও তেমন ফুরফুরে। আসলে ছেলেবেলা থেকে খেয়ে এসেছি মহেশখালীর মিষ্টি পান, টেকনাফের সুপারি, ঝিনুকের চুন, নরম খয়ের, চমনবাহার, মিষ্টি জর্দা সাথে বহুপদের বাহারি মসলা দিয়ে বানানো পান। তাই পানের জন্য টান আমার ছাড়ে না।
ঢাকায় এসে পড়েছিলাম মহা কষ্টে। এখানে সেই মিষ্টি পানের দেখা আজো মিলে নাই। ঢাকার পান দেখলেই সেই প্রবাদ মনে পড়ে।
” ভাদরের পান রাবণেও না খায়।”
তবু তাতেও আমার চলতো। কিন্তু বরের পান পছন্দই না। সে খায় না। কিনেও না। আমার দাদী বেঁচে থাকলে ঠিকই পান খাওয়া লাল ঠোটে মুচকি হেসে ছড়া কাটতেন-
“পান খায়ো রসিক জামাই কথা কয়ো ঠারে,
পানের জন্ম হইলো কোন অবতারে?…”
দাদী তবক দেওয়া পান মুখে পুরে, রাঙা ঠোটে হাসি ছড়িয়ে বলতেন-
“পান, পান্তা ভক্ষণ,
ঐ তো পুরুষের লক্ষণ,
আমি অভাগী তপ্ত খাই
কোনদিন বা মরে যাই।”
মিষ্টি কন্ঠে গানও করতেন-
“যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম,
মহেশখাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম…”
শীত বিকেলে আমাদের গলিপথে পানের হকার ডেকে ডেকে যায়। তা দেখে খাবার এমন ঝোঁক উঠলো, না খেয়ে আর উপায় কি! যদিও এখানকার পান মনের মতো নয়। আর আমার অবস্থাও এখন-
“নাইরে আমার সেদিন,
একখিলি পান দুদিন।”
পানওয়ালাকে একটা স্পেশাল পানের অর্ডার দিয়ে দিলাম। মসলাদার সেই পান মুখে দিতেই-
আহা্, স্বর্গীয় তৃপ্তিতে মুখটা ভরে গেল। মনে মনে দাদীর মুখে শোনা কবিতা আওড়াই-
“সুকেশিনীর শির শোভা কেশের ছেদনে
সুরসিকের মুখ শোভা তাম্বুল ভক্ষনে।”
Leave a Reply