আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বাড়ির ড্রাইভার, দারোয়ান পর্যন্ত সুযোগ পেলেই গম্ভীর ভঙ্গিতে এই প্রশ্ন করতো। যেন আমি কি হবো না হবো, তার উপর তার নিজের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে।
সেই সময়ের চিরাচরিত উত্তর ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট। এই তিন আইটেম এর বাইরে হওয়ার মতো তেমন কিছু তখন ছিল কি না কে জানে। তবে কিছু আঁতেল বাচ্চারা বলতো
যারা আরো এক ডিগ্রী উপরে তারা বলতো
“মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।”
“বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”
ইদানীং এই প্রশ্ন বিলুপ্ত প্রায়। এখনকার বাচ্চারা স্কুলের মোজা কই থাকে তাই জানে না, বড় হয়ে কি হবে ক্যাম্নে জানবে। তাদের ধারণা বই,খাতা,কাপড়-চোপড় যেমন রেডি থাকে, ভবিষ্যৎও এরকম রেডিই থাকবে। তাই প্রশ্ন করে কি না কি শুনতে হয়, এই ভয়ে বড়রা এই চ্যাপ্টারই বাদ দিয়ে দিয়েছে।
তার থেকে বড় কথা মুখ উজ্জ্বল করার জন্য এখন এতো অপশন, বাবা মায়েরাও আর তার জন্য বাচ্চার উপর নির্ভরশীল না। মুখ উজ্জ্বল করতে হলে পকেটে পয়সা থাকলেই হয়। পোলাপান জজ ব্যারিস্টার হওয়া লাগে নাকি?
একটা ভাল পার্লারে ফেয়ার পলিশ অথবা ভালো ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশন হলেই মুখ উজ্জ্বল করা যায়। তার জন্য নিজের ক্যারিয়ার, ফ্রেন্ড সার্কেল, হ্যাং আউট বাদ দিয়ে সারাদিন বাচ্চা নিয়ে পড়ে থাকবো? No way…
এখন আমার সমস্যা হলো, পার্লারে গিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুয়ে চাকমা মেয়েদের চড় থাপ্পড় খাওয়ার ধৈর্য্য আমার কোনোদিনও ছিল না। ইদানীং বাড়িতে বসেও মানুষ কতো কি করে। বিভিন্ন ধরনের মাস্কের ছড়াছড়ি চারিদিকে। শশা, আলু, কলা, মুলা থেকে শুরু করে প্যাঁক, কাঁদা কিছুই বাদ যায় নাই। বিশ্বাস হচ্ছে না? মার্কেটে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, cucumber cream, banana powder, mud mask আছে কিনা..
এখন, যেহেতু আমি এইসবের ধারে কাছে দিয়ে যাই না, তাই আমার bellow standard শ্যামলা মুখ উজ্জ্বল করার জন্য পোলাপানই একমাত্র ভরসা। তবে আমি তার জন্য তাদের উপর বিশেষ বলপ্রয়োগ করি না। আমি অল্পতেই অনেক বেশী খুশী হয়ে যাই।
ধরা যাক, মেয়ে একদিন চিনির মধ্যে পানি গুলায়ে এক গ্লাস শরবত বানালো। আমি তিনদিন খুশী তে ঘুমাতে পারি না। মনে হয়
“আহা! আহা! মেয়ে আমার সাবলম্বী হচ্ছে”।
আবার ধরা যাক, ছেলে কোনো কারনে আমাকে ছাড়াই একটা সাদা মিষ্টি চামচ দিয়ে কেটে কেটে খেয়ে ফেললো। খুশিতে আমার মুখ এতো উজ্জ্বল হয় যে BB Cream ও ফেল।
তবে তাদের বাবার মুখ উজ্জ্বল করা কিন্তু বিশাল কঠিন ব্যাপার। কারন তার মুখ প্রাকৃতিক ভাবেই যথেষ্ট উজ্জ্বল। তার উপর আরো উজ্জ্বল করতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।
এই উজ্জ্বলতার মাপকাঠি আবার গগনচুম্বী। 97% নাম্বার পেলেও মা-বাবাগন অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলে
“এবার ও প্লেস এ থাকতে পারলা না? ভাবী সম্প্রদায় কে মুখ দেখাবো কেমন করে?”
কোমলমতি পোলাপানগুলাও ধরেই নেয়
“আমাকে দ্বারা কিস্যু হবে না। I’m useless.”
আর এর পরের ঘটনা “কাহানী ঘার ঘার কি।” 97% নামতে নামতে 65% এ গিয়ে পৌঁছায়। আফসোস…
মুখ উজ্জ্বল করার এই প্রতিযোগিতার চরম সময়ে আমার মেয়ে কে কেউ একজন সেই অর্বাচীন প্রশ্ন করলো।
“বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও?”
সে উত্তর দিলো “বড় হয়ে আমি খুশী থাকতে চাই।”
তার উত্তর শুনে আমার আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো।
1st,2nd না হতে পারলে দুঃখে দাঁত লেগে যাওয়া মায়েদের এই সমাজ কি আমার মতো ড্রামা কুইন মা কে মেনে নেবে?!?!
Life is beautiful.. জীবন বড়ই সুন্দর
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply