এই বছর ৯/২/২০২০ এ একা-একা বেড়াতে গিয়েছিলাম কক্স বাজারে। আমার কখনো কখনো হঠাৎ করে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে ঢাকা শহরে বা বাসায়। মনে হয় কোথাও চলে যা-ই একা-একা। কোন দায়িত্ব থাকবে না।
অমরাবতী আর তাঁর বাবা কে বললাম আমি একা বেড়াতে যাবো কোথাও। তোমরা সাথে থাকলে মনে হয় সেই তো আমরা তিনজন। তখন সব কিছু কেমন ঘর ঘর মনে হয়।
তারপর সত্যি সত্যি এক বন্ধু’র অফিসের এক প্রোগ্রাম ছিলো কক্স বাজারে তাঁর সাথে চলে গেলাম। গ্রীণ লাইন নতুন ডাবল ডেকার গাড়ি এনেছে ঢাকা টু কক্সবাজার, দারুণ গাড়ি। আমার সিট ছিলো ২য় তলায়! আহা কি মজা! রাস্তার পাশের সব গাড়ি কে মনে হচ্ছে মাটি দিয়ে যাচ্ছে! আর আমি যাচ্ছি আকাশ দিয়ে! আমি কিন্তু এয়ারে যাওয়া বাতিল করে দোতলা বাসে যাচ্ছিলাম।
বাসটা সত্যি খুবই ভালো ছিলো। তারপর আমার প্রিয় সমুদ্রের ধারে বসে থাকা রাত একটা পর্যন্ত। আমার কাছে সমুদ্র সব সময় ভালো লাগে। রাত, দিন, সকাল, বিকাল সব সময়।আর আমার যখন কোন কিছু ভালো লাগে না। তখন আমি বাসার ভেতরে বসেও মেরিন ড্রাইভে চলে যাই। চোখ বন্ধ করে। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর রাস্তা হচ্ছে আমাদের মেরিন ড্রাইভের রাস্তা। একপাশে সমুদ্র আরেক পাশে পাহাড়। আর ইনানি বীচে আমার সব চাইতে পছন্দের বীচ। সেখানে গিয়ে আমি ঝিনুক কুড়াব না। এটাতো হতে পারে না। আমি যখন লাঠিতে ভর করে সমুদ্র দেখতে যাবো তখনও ঝিনুক কুড়াব।
আমাকে একা সমুদ্র দেখতে পাঠানোর সময় আমার মেয়ে আর তাঁর বাবা আমাকে বার বার বলে দিয়েছিলো আমরা কিন্তু তোমার সাথে নাই অতএব তুমি পানিতে নামবে না। যদি-ও ওরা , খুব ভালো করেই জানে আমি কখনো ভুলেও সমুদ্রে গোসল করি না। গতবার অমরাবতী আর ওর বাবা আমাকে জোর করে সমুদ্রের নামিয়ে ছিলো তাও হাঁটু পানি খুব হলে কোমরজল পর্যন্ত।আমার আসলে সমুদ্র দেখতেই ভালো লাগে।
এবার আমি একটা অন্য রকম মজা করেছি কক্সবাজার গিয়ে তা হলো আমি অনেক সময় কাটিয়েছি সুইমিংপুলের মধ্যে। মজার বিষয় হলো আমি কখনো সুইমিং পুলে নামি না। আসলে পানি নিয়ে আমার মধ্যে এক রকমের ভিতি কাজ করে। আমার মনে হয়। হুট করে কেউ আমার সাথে দুষ্টমী করে পা ধরে টান দিবে পুলে নামলে আর তখন আমি হাবুডুবু খাবো আর স্বাস নিতে পারবো না।
এবারও সুইমিং পুলে গিয়েছিলাম সমুদ্র সৈকতের বালু গুলো ধুয়ে ফেলতে।আর সবাই একটু মজা করে সাঁতার কেটে রুমে যাবে। তখন আমিও ওদের সাথে সুইমিং পুলে গেলাম। আমি পুলের সিড়ি তে বসে পা ভিজিয়ে রেখেছিলাম। তাঁর পর অল্প বয়সি এক কাঁপল আমাকে কিছুক্ষন খেয়াল করছিলো দূর থেকে। ওরা আমার কাছে এসে এমন ভাবে আমাকে উৎসাহ দিতে লাগলো পানিতে নামার জন্য। তারপর সত্যি সত্যি আমি পানিতে নামি এবং একঘন্টার বেশি সময় ঝাপা ঝাপি করি। এক সময় আমার মনে হলো আরে সাঁতার শেখা শুরু করি। আমি এবারের কক্সবাজারের ভ্রমনে সব চাইতে বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম সুইমিং পুলে সময় কাটিয়ে।
আমি কিন্তু এখনো পানিকে অনেক ভয় পাই এবং সাঁতার জানি না।
এবার আর একটা বিষয় ভুলার মতো না। তা হলো- আমি টানা দুই ঘন্টা একটা শুটকির দোকানে বসে ছিলাম। এর পেছনে কারণ হলো আমার সাথে আমার যে বন্ধু ছিলো সে তার বাসার জন্য শপিং করবে,এবং আমার সেই বন্ধু এক জিনিস কিনতে বিশ বার এক দোকানে যায় এক সময় আমি ক্লান্ত হয়ে, শুটকির দোকানে বসে থাকাটা, তার সাথে শপিং করার বেদনার চাইলে, কম বেদনার বলে মনে করি। আমি কিন্তু কোন ধরনের গন্ধ সহ্য করতে পারি না। এটাকে অমরাবতী বলেছে,
– মা এখন বুঝতে পেরেছো আমরা তোমার সাথে না থাকলে তোমার কত কষ্ট হয়।
আমার আর বাবার মতো করে তোমাকে কেউ যত্ন করবে না।
আমি তখন বলি এর জন্যই তো আমি তোমাদের সাথেই থাকি।
Leave a Reply