ফজলে লোহানী বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং বিটিভি’র এক সময়ের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ এর জনপ্রিয় উপস্থাপক।
জন্ম ১৯২৮ সালের ১২ মার্চ সিরাজগঞ্জের কাউলিয়া গ্রামের বিখ্যাত লোহানী পরিবারে।
বাবা আবু লোহানী ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। মা ফাতেমা লোহানী ছিলেন কলকাতা করপোরেশন স্কুলের শিক্ষিকা। বড় ভাই ফতেহ লোহানী ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা, আবৃত্তিকার, সাহিত্যিক, চিত্রপরিচালক, অনুবাদক ও বেতার ব্যক্তিত্ব।
ফজলে লোহানী সিরাজগঞ্জ বিএল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি ক্লাসে ভর্তি হলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেননি।
ভারত বিভাগের পর ফজলে লোহানী অন্য কয়েকজনের সাথে ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক ‘পূর্ববাংলা’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সাথে যুক্ত হন।
১৯৪৯ সালে তাঁর সম্পাদনায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘অগত্যা’।
পঞ্চাশের দশকে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং লন্ডনের বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে চাকরি করেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে ফজলে লোহানী সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন।
ফজলে লোহানী ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিচালনা করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ সে সময়ে দর্শক-শ্রোতা মহলে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাংলাদেশের টিভি রিপোর্টার হিসেবে ফজলে লোহানীর মতো প্রতিভার সাক্ষাৎ আর কখনো মিলবে কিনা সন্দেহ আছে।
‘যদি কিছু মনে না করেন’ এই শিরোনামে প্রতি মাসে পাক্ষিক দুটি টিভি রিপোর্টিং দেখার জন্য লাখ লাখ টিভি দর্শক বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো।
‘ভয়েস অব আমেরিকা’ ও ‘রয়টার’ এর জগত বিখ্যাত টিভি রিপোর্টারদের সমকক্ষ ফজলে লোহানী অপূর্ব ভঙ্গিমায় টিভি পর্দায় হাজির হয়ে দর্শকবৃন্দের বিপুল করতালির মধ্যে কখনো হাসি আনন্দ, কখনো বেদনা ভারাক্রান্ত টিভি রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখতেন।
সেই আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে টিভি রিপোর্টিংয়ের প্রবর্তন ঘটানোর মতো যুগান্তকারী কাজ তিনি করেছেন। এসিড নিক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতার শুরুটা হয়েছিল তাঁরই হাত ধরেই।
লেখক হিসেবেও তিনি অনেক সুনামের অধিকারী ছিলেন। সর্বশেষ ফজলে লোহানী ‘পেনশন’ নামে একটি সৃজনশীল চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ফজলে লোহানী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং তাঁর সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ফজলে লোহানী ৩০ অক্টোবর ১৯৮৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
শ্রদ্ধাঞ্জলি।
Leave a Reply