স্কুলে ইতিহাস আমার খুব প্রিয় বিষয় ছিল। এসএসসি পরীক্ষার জন্য পাক ভারতের ইতিহাস নামের একটি বই পড়েছিলাম। ফিরে তাকালে বুঝতে পারি আসলে আমার /কারো সঠিক পদ্ধতিতে ইতিহাস পড়া হয়নি। রাজা, বাদশাহ, কীর্তিমান ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের চরিত্র কৃতিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এবং শুধু প্রশংসা বর্ণিত ছিল। রাজা বাদশাহদের চরিত্র কৃতিত্বে তেমন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল না। এক জনের চরিত্র কৃতিত্ব অন্য জনের জন্যও ব্যবহার করা যেতো। প্রমাণিত। বোর্ডের পরীক্ষায় প্রশ্নে যার চরিত্র কৃতিত্ব এসেছিল সেটা আমি তেমন পড়িলি। অন্যদের চরিত্র কৃতিত্ব ব্যবহার করে লিখেছিলাম।
প্রথম কথা হলো, বিশ্ব ইতিহাস বলে কোন বিষয় ছিল না যেটা থাকা খুবই জরুরী। এখন কি আছে? শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসাবে বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে কিছু অনুশীলন জীবনের সাথী হতে হয়। তার একটি হলো, ক্রিটিকাল বিশ্লেষণের চর্চা এবং দক্ষতা অর্জন। সর্ব প্রয়োগে অভ্যস্ত হওয়া। রাজা, বাদশাহ বা কীর্তিমান মানুষদের প্রশংসা মুখস্থ করে ক্রিটিকাল বিশ্লেষণের সাথে পরিচিতি ঘটে না।
স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এত বছরের শিক্ষা জীবনে ক্রিটিকাল বিশ্লেষণ কোন প্রয়োজনীয় চর্চা ছিল না। এখনো তা নেই। আমি মনে করি এটি শিক্ষা ব্যবস্থার চরম একটি ব্যর্থতা।
তাই সমাজে অন্ধভক্তি সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতির ছড়াছড়ি দেখা যায়। অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন না করার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হয়। তবে প্রশ্ন করা মানে অযথা তর্ক করা বা ঔদ্ধত্য দেখানো নয়।
আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি। গণতন্ত্রের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো আলোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা। কেবল ভোট দেয়ার অধিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এমনকি অন্ধ ভক্তির পরিবেশে ভোট ব্যবস্থাও নানা ভাবে বিকৃত হতে পারে। হয়েছে। জনগন যত অন্ধভক্তি থেকে মুক্ত হবে নেতাদের দায়বদ্ধতা তত বাড়তে থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলি এবং তাদের সমর্থকদের পরস্পরের আলোচনায় প্রথম পর্যায়ে কারো কোন দোষ নেই সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়। এর পর তারা বলতে চেষ্টা করে কে কার চাইতে কম খারাপ বা বেশী খারাপ। এভাবে সিস্টেম চলতে থাকে। কেবল দলীয় সাফল্যের প্রচার হতে থাকে। সাফল্য এবং ব্যর্থতাকে পাশাপাশি না রাখলে সাফল্যের সঠিক পরিমাপ হয় না।
যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সংস্কৃতির পরিবর্তন আনা সময়ের দাবী। দল এবং নেতাদেরকে ভালবাসার পাশাপাশি তাদের সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতাকে স্বীকার করতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। সংস্কারের জায়গাগুলি চিহ্নিত করতে হবে।
ইতিহাসের সেই রাজা, বাদশাহদের চরিত্র কৃতিত্ব বর্ণনার মত শুধু প্রশংসার প্রতিযোগিতায় অবস্থান করলে সময় আটকে থাকবে। বরং ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণের অব্যাহত চর্চা তাদের দল এবং নেতাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উপকার বয়ে আনবে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply