হাদীস নং ১ঃ—
أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ بْنُ سَعِيدٍ الثَّوْرِيِّ، عَنْ مَيْسَرَةَ، عَنْ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرُو، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ، رَأَى رَجُلًا يُصَلِّي قَدْ صَفَّ بَيْنَ قَدَمَيْهِ فَقَالَ: «خَالَفَ السُّنَّةَ وَلَوْ رَاوَحَ بَيْنَهُمَا كَانَ أَفْضَلَ»
হযরত আবু উবাইদা রহ. বলেন: হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এক ব্যক্তিকে দেখলেন দু’পা ছড়িয়ে দিয়ে নামায পড়ছে। তিনি বললেন: লোকটি সুন্নাত পরিপন্থী কাজ করেছে। যদি সে দু’পায়ের ওপর পালাক্রমে ভর করে নামায আদায় করতো তাহলে সেটা উত্তম হতো। ( ইবনে আবী শাইবা: ৭১৩৫)
হাদীসটির স্তর : হাসান, মারফু’। মাইসারা ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখরীর রাবী। আর মাইসারা ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৫৭৫২) মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার তাহকীকে শায়খ মুহাম্মাদ আউওয়ামা বলেন: হাদীসটির সনদ হাসান।
আবূ উবায়দা রহঃ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন যে, তিনি তার পিতা ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে কিছুই শোনেন নি ৷৷
কিন্তু হাফেজ যাহাবী রহ. আবু উবায়দা সম্পর্কে লিখেছেন, روى عن أبيه شيئا، وأرسل عنه أشياء অর্থাৎ তিনি কিছু হাদীস সরাসরি তাঁর পিতা থেকে (শুনে) বর্ণনা করেছেন, আর অনেক হাদীস মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারু আ’লামুন নুবালা ৫/২১২, রাবী নং ৫০৯)
ইমাম বুখারী রহ. সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন:—أنه فيما سأل أباه عن بيض الحمام فقال صوم يوم অর্থাৎ তিনি তার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইহরামরত ব্যক্তি যদি কবুতর জাতীয় পাখির ডিম ভেঙ্গে ফেলে তাকে কী ক্ষতিপূরণ আসবে? তিনি বললেন, একদিনের রোজা রাখতে হবে।—(আলকুনা: ৪৪৭)
আল মু’জামুল আউসাত্ব এ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে আবু উবায়দা রহঃ এর সামা বর্ণিত আছে:-
9189 – وَبِهِ، حَدَّثَنَا أَبُو قُرَّةَ، قَالَ: ذَكَرَ زَمْعَةُ، عَنْ زِيَادِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، حَدَّثَنِي يُونُسُ بْنُ خَبَّابٍ الْكُوفِيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، يَذْكُرُ أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ
আল মু’জামুল আউসাত্ব লিতত্বাবারানী,হাঃ ৯১৮৯
সুতরাং, আবু উবায়দা তার পিতা থেকে কিছুই শোনেননি: কথাটি সঠিক নয়।
↓
হাদীস নং ২ঃ—
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ عُيَيْنَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، قَالَ : كُنْتُ مَعَ أَبِي فِي الْمَسْجِدِ فَرَأَى رَجُلاً صَافًّا بَيْنَ قَدَمَيْهِ فَقَالَ أَلْزِقْ إحْدَاهُمَا بِالأُخْرَى لَقَدْ رَأَيْت فِي هَذَا الْمَسْجِدِ ثَمَانيَةَ عَشَرَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا رَأَيْت أَحَدًا مِنْهُمْ فَعَلَ هَذَا قَطُّ
উয়াইনা বিন আব্দুর রহমান বলেন: আমি আমার পিতার সাথে মসজিদে ছিলাম। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে দু’পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বললেন: এক পায়ের সাথে অপর পা মিলিয়ে দাঁড়াও। আমি এ মসজিদে আঠারো জন সাহাবাকে দেখেছি, তাঁদের কেউ পা ছড়াইয়া দাঁড়াতেন না। (ইবনে আবী শাইবা: ৭১৩৬)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণের মধ্যে হযরত ওয়াকী’ প্রসিদ্ধ ইমাম। তাঁর উসতাদ উয়াইনা বিন আব্দুর রহমান ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৪৪১১) আর উয়াইনার পিতা আব্দুর রহমানও ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৪২৬৯)
↓↓
↓
দুই পায়ের মাঝে সর্বোচ্চ ততটুকু ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে করে দুই পায়ের মাঝখানে জুতা রাখলে জুতাটা দুই পা দ্বারাই অনূভুত হয় ৷৷ এই দূরুত্ব সর্বোচ্চ ৬—১০ ইঞ্চি হতে পারে ৷
হাদীস নং ৩ঃ—
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ رُسْتُمَ أَبُو عَامِرٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلاَ يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ وَلاَ عَنْ يَسَارِهِ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ إِلاَّ أَنْ لاَ يَكُونَ عَنْ يَسَارِهِ أَحَدٌ وَلْيَضَعْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. বলেন: তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে তখন তার জুতো যেন ডানে না রাখে এবং বামেও না রাখে; কেননা তা অপরের ডান। হ্যাঁ, বামে কেউ না থাকলে ভিন্ন কথা। বরং সে যেন জুতো তার দু’পায়ের মাঝে রাখে। (আবু দাউদ: ৬৫৪)
হাদীসটির স্তর : হাসান-সহিহ । আব্দুর রহমান বিন কায়েস ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর আব্দুর রহমান مقبول “গ্রহণযোগ্য”। (তাকরীব: ৪৪৫৯)
حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْغَافِقِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، ح وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، – وَحَدِيثُ ابْنِ وَهْبٍ أَتَمُّ – عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، – قَالَ قُتَيْبَةُ عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ أَبِي شَجَرَةَ، لَمْ يَذْكُرِ ابْنَ عُمَرَ – أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” أَقِيمُوا الصُّفُوفَ وَحَاذُوا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ ” . لَمْ يَقُلْ عِيسَى ” بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ ” . ” وَلَا تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ اللهُ ” . قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَبُو شَجَرَةَ كَثِيرُ بْنُ مُرَّةَ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَمَعْنَى ” وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ ” . إِذَا جَاءَ رَجُلٌ إِلَى الصَّفِّ فَذَهَبَ يَدْخُلُ فِيهِ فَيَنْبَغِي أَنْ يُلَيِّنَ لَهُ كُلُّ رَجُلٍ مَنْكِبَيْهِ حَتَّى يَدْخُلَ فِي الصَّفِّ . – صحيح
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, ‘‘তোমাদের ভাইয়ের হাতে’’ শব্দগুলো নেই। ( তিনি আরো বলেন,) শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমাত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমাত হতে কর্তন করবেন।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ শাজারার নাম হচ্ছে কাসীর ইবনু মুররাহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, ‘‘তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও’’ এর অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি এসে কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিই তার জন্য নিজ নিজ কাধঁ নরম করে দেবে, যেন সে সহজে কাতারে শামিল হতে পারে।
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبَانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَالَ ” رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ ” . – صحيح
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (সলাতের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকটে রাখবে। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি (ফাঁকা) জায়গাতে শয়তান যেন একটি বকরীর বাচ্চা ন্যায় প্রবেশ করছে।
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، وَسُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَا حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصَّفِّ مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ ” – صحيح : ق
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাতারসমূহ সোজা করবে। কারণ কাতারসমূহ সোজা করার দ্বারাই সলাত পূর্ণতা পায়।
(আবু দাউদ:৬৬৮)
(قَوْلُهُ بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِي الصَّفِّ) الْمُرَادُ بِذَلِكَ الْمُبَالَغَةُ فِي تَعْدِيلِ الصَّفِّ وَسَدِّ خَلَلِهِ وَقَدْ وَرَدَ الْأَمْرُ بِسَدِّ خَلَلِ الصَّفِّ وَالتَّرْغِيبِ فِيهِ فِي أَحَادِيثَ كَثِيرَةٍ أجمعها حَدِيث بن عمر عِنْد أبي دَاوُد وَصَححهُ بن خُزَيْمَةَ وَالْحَاكِمُ
“উক্ত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে কাতার সোজা করা এবং ফাঁকা বন্ধ করে পরস্পর মিলেমিলে দাঁড়ানো। তিনি আরও বলেন: ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত ইবনে উমার রা.-এর হাদীস। ইবনে খুযাইমা ও হাকেম উক্ত হাদীসকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন”।
(ফাতহুল বারী লি-ইবনে হাজারঃ ২/২১১)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে—নামধারী আহলে হাদীসরা একেকজন মুসুল্লি হিসেবে পা অতিরিক্ত ছড়াইয়া বিদআত করতেছে, আবার অনেক গ্রাম্য নিরক্ষর মুসুল্লিরা বিনা ওযরেই দুইজন মুসল্লির মধ্যে এমন ফাঁকা রাখাকে অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে ৷৷
উক্ত দুই আমল ই বর্জনীয় ৷৷৷ বরং সুন্নত হচ্ছে দুই জন মুসুল্লিদের মধ্যকার ফাঁকা যতটা সম্ভব কম রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো এবং প্রতিটা মুসুল্লির পাঁয়ের ফাঁক যতটা সম্ভব কম করে দাঁড়ানো ৷৷
আল্লাহ তা’য়ালা তাওফীক দান করুন, আমিন ৷৷
Leave a Reply