আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাত পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শা’বানের পনের তারিখে রোযা রাখা। এ বিষয়টিও বুঝে নেয়া দরকার। হাদীসে রাসূলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীসে এ কথা বলা হয়েছে যে, শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।”বর্ণনা ধারার দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই উক্ত দিবসের রোযাকে ঐ একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ! শা’বানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান হতে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ঠ ফযীলত রয়েছে। কিন্তু‘২৮ ও ২৯ তারিখে রোযার ব্যাপারে হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখ না।”যাতে রমযানের জন্য পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রস্তুতি নেয়া যায়। কিন্তু‘২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।
একটি লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে, শা’বানের এই পঞ্চদশ তারিখটি “আইয়ামে বীয”এর অন্তর্ভুক্ত। হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসের “আইয়ামে বীযে”রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এ দুটি কারণকে সামনে রেখে শা’বানের ১৫তম দিনটিতে রোযা রাখে যে, দিনটি আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত।
পাশাপাশি শা’বানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ্ সে প্রতিদান পেয়ে যাবে। তবে কেবল ১৫ই শা’বানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। বরং তাঁরা বলে দিয়েছেন শা’বানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখেন তবে ইনশাআল্লাহ সওয়াব মিলবে। তবে মনে রাখা চাই যে, এ মাসে নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট্য নেই।
আমি পূর্বেই বলে এসেছি যে, শরীয়তের প্রতিটি বিষয়কে তার আপন গন্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রতিটি বস্তুকে তার আপন সীমানায় ছেড়ে দেওয়াই স্বাভাবিক এবং অত্যাবশ্যকও বটে। আর দ্বীন হচ্ছে এই সীমারেখার সংরক্ষণেরই নাম। নিজের জ্ঞান খাটিয়ে কোন কিছুকে আপন স্থান হতে সরিয়ে দেয়ার নাম দ্বীন নয়। আর যদি এই নির্দিষ্ট সীমারেখার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে কেউ রোযা রাখেন তবে তা নেহায়েত ভাল। ইনশাআল্লাহ এর প্রতিদানও পেয়ে যাবেন। তবে এই রোযাকে নিয়মিত সুন্নতের তালিকায় স্থান দেয়া থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ।
হযরত আলী (রযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫তম রাত তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তখন তোমরা সে রাতে নামায পড় এবং পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ। কারণ সেদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহপাক প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং (বান্দাহদের ডেকে) বলতে থাকেন আছ কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী যাকে আমি ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোন রিযিক প্রার্থী যাকে আমি রিযিকের ব্যবস্থা করে দেব? আছ কি কোন বিপদগ্রস্ত যাকে আমি বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতেই থাকেন, আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী? আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী? আমি যার সকল মনোস্কামনা পূর্ণ করে দেব? (ইবনে মাযাহ, হাদীস নং ১৩৮৪, শোয়াবুল ঈমান, খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৮,৩৭৯, হাদীস নং ৩৮২২-৩৮২৩)
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply