মাতৃগর্ভে ১২০ দিন তথা চার মাস অতিক্রম করে পঞ্চম মাসে ভ্রূণের মধ্যে আত্মার সঞ্চার ঘটে। যেমনটি সহীহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (যিনি ছিলেন পরম সত্যবাদী এবং সত্যায়নকৃত):
إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا ، يُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ ، وَيُقَالُ لَهُ : اكْتُبْ عَمَلَهُ ، وَرِزْقَهُ ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ ، ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوحُ … ) رواه البخاري (3208) ، ومسلم (2643)
“নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে। অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, তার রিজক, তার আয়ু এবং সে কি সৌভাগ্যবান হবে নাকি হতভাগ্য হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগে তা প্রাণহীন একটি মাংসপিণ্ড মাত্র। এটি মানব সৃষ্টির সূচনা। তাই তার উপর পূর্ণ মানুষের বিধান প্রযোজ্য হবে না। এ কারণে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের মধ্যে আত্মার সঞ্চার ঘটার পূর্বে যদি মিসক্যারেজ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর মৃত মানুষের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ তাকে গোসল, জানাজা, দাফন, কাফন, ইত্যাদি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
অনুরূপভাবে সে পরকালে জান্নাতবাসী হবে না বা কেয়ামতের দিন তার মায়ের জন্য শাফায়াত করবে না বা নাড়ির সাথে টেনে জান্নাতে নেবে না। কারণ প্রাণের সঞ্চার ঘটার পূর্বেই তা নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে আত্মার সঞ্চার ঘটার পরে এমনটি হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ-এর আলেমদের মাঝে কোনও দ্বিমত নেই। অনুরূপভাবে আশা করা যায়, কেয়ামতের দিন সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফায়াত করবে।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
” قبل أربعة أشهر : لا يسمى ولداً، إنما يسمى ولد بعد الأربعة ، بعد نفخ الروح فيه ، يغسل ويصلى عليه ، ويعتبر طفلاً ترجى شفاعته لوالديه
“চার মাস পূর্বে তাকে “সন্তান” বলা হবে না। সন্তান বলা হবে, চার মাস পরে যখন তার মধ্যে আত্মার সঞ্চার ঘটবে। (এরপরে গর্ভপাত হলে) তার গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। এটিকে “শিশু” হিসেবে গণ্য হবে। আশা করা যায়, সে তার পিতা-মাতার জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।’
وقال الإمام النووي : أجمع من يعتد به من علماء المسلمين على أن من مات من أطفال المسلمين فهو من أهل الجنة ؛ لأنه ليس مكلفا . أ.هـ ” شرح مسلم ” (16 / 207) .
”মুসলিমদের নির্ভরযোগ্য আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত হল, মুসলিমদের যেসব শিশু মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতবাসী হবে। কারণ তার উপর শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য ছিল না।” [শারহে মুসলিম ১৬/২০৭]
তবে অকাল গর্ভপাত যখনই হোক না কেন তা একজন মায়ের জন্য মুসিবত ও কষ্টের কারণ। এই ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তাকে সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর প্রদানে :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply