সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা
১৫ মে, ২০২২
আজ এমন একজন মানুষ নিয়ে আলোচনা করবো যিনি চাকুরী জীবন শেষ করে আজ আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। নাম বাবু হরিচাঁদ মণ্ডল সুমন। তিনি কেবল আমার কলিগই নন, একজন খুব কাছের বন্ধুও বটে। সবকিছুই তার সাথে শেয়ার করতাম। আমি তাকে ‘সুমন দা’ বলে সম্বোধন করি। মাদারিপুরের ছেলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন শেষে আমাদের কলেজে যোগদান করেন ১৯৯৬ সালে। তখন কলেজের ক্যাম্পাস ছিল ৭৮ বড়বাগ, মিরপুরে। সুমন দা সারাজীবন আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে দেশকে ভালোবেসেছেন, নিজেকে তৈরী করেছেন বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে। বাবু হরিচাঁদ মণ্ডল সুমন ছাড়াও আরও যাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কলেজে একসাথে মিশে আসছি তাদের মধ্যে মোঃ সাগর হোসেন, মোঃ মিজানুর রহমান, বাবু পংকোজ কুমার বিশ্বাস, মোঃ ওয়াহেদুল আলম, মোঃ এস এম শামীম, মোঃ আক্তারুজ্জামান, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, কবির হোসেন কাদেরী, মোঃ নুরউদ্দিন মোল্লা, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া, তুষার বাবুসহ অনেকেই। কিন্তু সুমন দা ছিলেন আমার নিকট সবার উর্দ্ধে। কেন যেন তাকে ভালোবেসেছিলাম নিজের মতো করে, পরিবারের একজন সদস্য মনে করে।
সুমন দা বেশকিছুদিন কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দু’তলায় উপাধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে তিনি বসতেন। আমি সবসময় এ রুমটা নিজের মনে করতাম; অবাধ বিচরণ ছিল এখানে আমার। কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রথমে ঢুঁকতাম এ রুমটায়; এখান থেকেই রুটিনমাফিক ক্লাসরুমে গমন করতাম। মনেপড়ে, আব্বা-মা জীবিত থাকাকালীন আমি বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় অনুমতি না নিয়ে কোথাও বের হয়েছি বলে মনে পড়ে না, ঠিক এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলাম আমার বঙ্গবন্ধু কলেজে। ক্লাস শেষ করে আমি যখন ক্লান্ত আমার বাসা পল্টনের উদ্দেশ্যে রওনা হবো, ঠিক তখন মনে পড়তো সুমন দা’র কথা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে না বলে কখনও চলে আসছি বলে মনে পড়ে না। তার সান্নিধ্য নিরাপদ মনে হতো; গত পঁচিশ বছর বড় ভাইয়ের মতো আগলিয়ে রেখেছেন আমাকে।
আজ বাবু হরিচাঁদ মণ্ডল সুমন ছাড়াও সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ সরকার, প্রভাষক মোঃ ছানোয়ার হোসেনের অবসরশেষে বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। সম্পূর্ণ কলেজ আজ নিস্তব্ধ, চারিদিকে শোকের ছায়া। সত্যিকারার্থে ১৭.১০.১৯৯৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রতিষ্ঠার পর আজকের মতো এতো আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হতে কখনও দেখিনি আমি। প্রত্যেক শিক্ষকের মধ্যে ছিল উৎকণ্ঠা। পঁচিশ বছর একসাথে পথ চলা, অনেক কথা, অনেক স্মৃতি। ‘আসলে দেখলাম, বিদায় কখনও সুখের হয় না। কিন্তু তারপরেও নিয়মমাফিক বিদায় তো জানাতেই হবে, এটাই বাস্তবতা’। আমি মনে করি, “মানুষের অনুভূতিগুলো সর্বদা শ্রদ্ধা ও আলোকিত থাকে দু’টি সময়- মিলনের সময় এবং বিদায়ের সময়। মিলনের যেমন আনন্দ রয়েছে, ঠিক তেমনি বিদায়ের রয়েছে যন্ত্রণা। কেননা, ভালো মানুষদের বিদায় হয় দুঃখের আর খারাপ মানুষের বিদায় হয় সুখের।”
রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থণা করি আমাদের দীর্ঘদিনের এই তিনজন সাথীদের শারিরীকভাবে সুস্থ রাখবেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বাকী জীবন অতিবাহিত করবেন এ কামনা করি।
Leave a Reply