এ প্রশ্নের জবাব তিনি ব্যক্তি বুঝে দিতেন।
একবার মাদরাসা থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত একজন মাওলানা জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর- আপনিও মাওলানা, আমরাও মাওলানা, আমাদের পার্থক্য কোথায়.?
মাওলানার জবাবে তিনি বললেন, তোমরা সেই মাওলানা যারা দূর থেকে শয়তানকে দেখে ‘লা হাওলা ওয়ালা’ পড় আর আমরা সেই মওলানা, যারা দূর থেকে শয়তানকে দেখে আগে কাছে ডাকি, তারপর শয়তানের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে শয়তানকে দিয়ে আমাদের কাজ করায়ে নিই।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (রহ:) আল্লাহর একজন ওলি ছিলেন। যেমন ওলি আউলিয়া ও রাসূল প্রেমিক ছিলেন। তেমনি ছিলেন শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠ, আমিত্ব লোভ হিংসা ভয়কে জয়কারী প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের অধিকার আদায়, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন। অস্প্রদায়িক, অহিংস, শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সহজ সরল অনাড়ম্বর নির্লোভ নিরহংকার জীবনযাপন করতেন।
আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে আমি একবার পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলাম। সেই সফরে আমার বেশ মজার ও ইয়াদগার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, সাথে কিছু জ্ঞানও লব্ধ হয়েছে। একটা মজার ঘটনা এমন, পাকিস্তানে ভাসানী মিঠাই (মিষ্টি, মন্ডা) একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড। বিয়ে শাদী বা কোন শুভ কাজে ভাসানী মিষ্টির ব্যাপক কদর। পানের দোকান ভাসানীর নামে, বহু সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে ভাসানীর নামে। সে দেশের আপামর জনগণের সিংহভাগ মওলানা সাহেবকে চিনেন, জানেন এবং শ্রদ্ধা করেন-এখনো।
মওলানা ভাসানী সুদূর চীন দেশেও অতিশয় শ্রদ্ধা ও স্মরণীয় হয়ে আছেন বলে জানি। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে ভাসানী মতবাদের কদর হয়ে আসছে। সম্প্রতি মওলানা ভাসানী পরিষদ অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে মওলানা ভাসানীর অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনের কথা জোরালোভাবে উঠে এসেছে।
দ্বীনের খেদমত, দ্বীনি জ্ঞান অর্জন তথা ধর্মীয় পরিমন্ডলেও তাঁর ছিলো দৃঢ় পদচারণা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বা মূলধারার ইসলামী আকিদায় সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে সূফীবাদী দুনিয়ায় তিনি ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও প্রশংসিত।
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার স্বর্ণ সন্তান মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলের সন্তোষে আবাস গড়েন। সেসময় সিরাজগঞ্জে বেলকুচির এনায়েতপুর হতে দ্বীনের দাওয়াত ও ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার করছিলেন হযরত মাওলানা খাজা শাহ্ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ:)। খাজা সাহেবের সান্নিধ্যে প্রায়ই যেতেন মওলানা ভাসানী। শান্তিময় জীবনের মন্ত্র শিখতেন ও দ্বীনের দীক্ষা নিতেন খাজা সাহেবের নিকট। মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা বিষয়ে মতবিনিময় করতেন খাজা হুজুরের সাথে। মওলানা ভাসানী খাজা হুজুরকে ক্বলব বা অন্তরের ডাক্তার বলে পরিচয় দিতেন নিজের ভক্তদের মাঝে। বলতেন, ধর্ম তো সবাই চিনে কিন্তু শান্তির ধর্ম খাজা ইউনুছ আলী শেখায়।
আল্লাহ উনাকে জান্নাতের আলা মাকাম দান করুন- আমীন।
ছবি: সেই সময়ের নয়াযুগ পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর ইন্তেকালের সংবাদ। একটি বিষয় লক্ষণীয়, আমরা জানি ও দেখে আসছি যে, পত্রিকার নাম লোগো ডেটলাইন সবসময় সবার উপরে থাকে কিন্তু এখানে সংবাদকে এতোটাই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে যে, তা নিচে নামিয়ে সংবাদের হেডিংকে উপরে স্থান দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply