রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলবে এবং শাসনকর্তৃপক্ষের আমীর বা খলিফার নির্দেশ শুনবে ও মানবে,এমনকি সে যদি হাবশী গোলামও হয়।কেননা,আমার পর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে, সে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমরা আমার সুন্নাহ তথা আমার নীতি-আদর্শ এবং সুপথগামী খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ বা কর্মধারা এর অনুসরণ করবে। এবং তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মাড়ীর দাঁতে তা কামড়ে ধরে রাখবে। আর দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। কেননা, দীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত প্রতিটি বিষয়ই বিদ’আত।আর প্রত্যেক বিদ’আতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।
[ সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, জামে তিরমিযী ]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযিঃ হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতকে গোমরাহীর উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না। অর্থাৎ এ উম্মতের সবাই একসাথে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর আল্লাহর হাত ও সাহায্য রয়েছে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ট জামাতের সঙ্গে। যে ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের মত ও পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়,সে মূলত জাহান্নাম অভিমুখেই তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।অর্থাৎ এ বিচ্ছিন্নতা তাকে জাহান্নামে পতিত করবে।
[ জামে তিরমিযী হাদিসঃ২১৬৭ ]
রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, মুসলমানদের ব্যাপক বৃহৎ দলের অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসরণ করো। তাদের সঙ্গে থাকো।কেননা যে তাদের থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করলো,সে মূলত জাহান্নামের পথেই বিচ্ছিন্ন হলো।
[সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত,পৃষ্ঠা ৩০]
রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে শয়তান মানুষের জন্য এমনই চিতাবাঘ তুল্য,যেমন ছগল ভক্ষণকারী চিতাবাঘ। চিতাবাঘ ঐ ছাগলকে ধরে নিয়ে যায়, যা ছাগলপাল থেকে পৃথক হয়ে দূরে সরে যায় বা সাধারণ ছাগল থেকে আলাদা হয়ে চলতে থাকে। সুতরাং তোমরা কর্মে ও চিন্তা দর্শনে সরলপথ ছেড়ে আঁকাবাঁকা পথে চলা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা মুসলমানদের সাধারণ ও ব্যাপক ও বৃহৎ দলের সঙ্গে লেগে জুড়ে থাক।
[মুসনাদে আহমাদ হাদিসঃ২২০৮২]
আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে পরপর ৭ টি বিষয়ের কসম খেয়ে বলেন—
.
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىهَا
.
‘‘সে সফলকাম হলো, যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলো।’’ [সুরা শামস, আয়াত: ০৯]
.
তাই, মুমিনের জীবনে আত্মাকে বিভিন্ন রোগ ও গুনাহ থেকে মুক্ত করে একে পরিশুদ্ধ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক।
.
ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এমন অনেক ইবাদতগুজার লোক আছে, যারা অধিক নামাজ আদায় করে, অধিক রোজা রাখে, কিন্তু আত্মার পরিশুদ্ধির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় না। ফলে নিজের অজান্তেই তারা অহংকার, লৌকিকতা, মুনাফিকি ও অজ্ঞতায় আক্রান্ত হয়ে যায়।’
[আত-তাবসিরাহ: ২/২০৮]
.
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দেহের রোগের তুলনায় অন্তরের রোগ বেশি জটিল। কেননা, দেহের রোগ হয়তো রোগীকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু অন্তরের রোগ রোগীকে অনন্ত দুঃখ-কষ্টে (জাহান্নামে) পৌঁছে দেয়। ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) ছাড়া এ রোগের অন্য কোনো ঔষধ নেই।’
[মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ: ১/৩০৬]
.
আত্মার কিছু ভয়াবহ রোগ হলো: অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণা, লৌকিকতা, মুনাফিকি, লোভ-লালসা ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আত্মার রোগগুলো দৃশ্যমান থাকে না, তাই মানুষ এগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ এগুলো মানুষের দ্বীনদারির বিরাট ক্ষতি সাধন করে। এগুলো থেকে বাঁচার প্রধান কয়েকটি উপায় হলো: প্রতিদিন আত্মসমালোচনা করা, নিজের কাজের হিসাব নেওয়া, নেককার ব্যক্তিদের সাহচর্যে থাকা, অর্থসহ বুঝে বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করা, দ্বীনের ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা, সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু‘আ করা।
আমরা হাদিস মেনেও আহালে হাদিস হতে পারলামনা। মুফতী দেলোয়ার হুসাইন হাফিঃ
Leave a Reply